পরিচিতি

জগতের যত কঠিন কাজ আছে তার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন কাজ খুব সম্ভবত নিজের ইন্ট্রোডাকশান দেওয়া। আমি কে , আমি কী এর উত্তর দেওয়ার থেকে কঠিন কাজ নেই। আমার এই পুঁচকে ব্লগের বয়স খুব বেশিদিন না  এবং আদৌ কেউ এই ব্লগ পড়ে কিনা সে নিয়ে আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে , তাও  নিজের পরিচিতিটা দেওয়া উচিত, তা সে যত কঠিন কাজ ই হোক না কেন।  তাহলে শুরু করা যাক...... আমার নামঃ  -আমার ভাল নাম সেঁজুতি , ইংরিজিতে বানান বিভ্রাটে বেশির ভাগ লোকের কাছে আমি সেঞ্জুতি  , তাই আমার ডাক নামটা আমার বেশি পছন্দের, সেটা হোল ঝিল্লী, এই নামটা আমার দিদার দেওয়া। ট্যাঁ ট্যাঁ  করে সারাদিন চিৎকার করতাম বলে হয়ত।  আমি কী করি? -এটার উত্তর দেওয়া সবচাইতে সহজ। আমি ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াই। আমার বয়স কত? - আমার জন্ম নব্বই দশকের গোড়ার দিকে। বাকিটা আর বললাম না।  আমার ঠিকানা -কেন এই তো - http://choshmaebongityadi.blogspot.in  তবে আমি যেখানে 'থাকি' সে জায়গাটা হোল কোলকাতা। রিলেশানশিপ স্ট্যাটাস   - টারমিনালি সিঙ্গেল  রিলিজিয়াস ভিউস   - কি সব্বনাশের প্রশ্ন !  আমার কী ভালো লাগে? -হেহ! সুপার হিরো কমিক্স (বিশেষত হারলি কুইন এ

বাঙালি জাতির জঙ্গল অভিযান

৫.

সকাল ৫:১৫
----করররিং ক্রিং করররিং ক্রিং
-উম...হ্যালো..
-এই রেডি হ, আমি আর মেসো টিকিট কাটতে এসেছি, সবাইকে উঠতে বল, ফোন করলেই বেরিয়ে জিপ ভাড়ার জায়গাটায় চলে আসবি।

-অ্যাঁ! 

------খুট-----
মাআআআআআ....শিগগির ওঠো, বাবা রেডি হয়ে থাকতে বললো।
......
৬:১৫
-তোর বাবারা কই?
-ওই তো , ঐ তো বিস্কিট কালারের টুপি
-আইছস! চল চল। প্রথম গাড়ি না হলে কিসু দেখতে পামু না। দাদা, চলুন চলুন...আরে জলদি চলেন না...
-একি... তুমি হাঁপাচ্ছো কেন! মুখ টুখ লাল হয়ে গেছে!
-আরে আমি ভীষণ এক্সসাইটেড। কাল বৃষ্টির জন্য বাইরাইতেই পারলাম না। আরে দাদা চলুন না।
-হ্যাঁ হ্যাঁ, চলেন চলেন
৬:২৫
ক্যাঁচ ঘ্যাচ ঘরর ঘষ....
-ও কী। ও কী হল! গাড়ি থামালেন কেন। 
-থামাই নাই, থাইম‍্যা গেল তো।
-আরে বাকি গাড়ি গুলো তো এগিয়ে যাচ্ছে।
-আরে দূর মশাই, খাড়ান না। এই রতনা, ইঞ্জিনটা দেখ দেখি
--------৬:৪৫-----
গর গর গড়রর...
-উঠুন উঠুন, স্টার্ট নিসে
৭:০৫ 
পরপর সার দিয়ে জিপ চলছে, মাঝে মাঝে একটা দুটো ময়ূর বেজায় তাচ্ছিল্যের সাথে আমাদের দেখে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে আর চারপাশ থেকে অসংখ্য নাম না জানা পাখির ডাক শুনতে পাচ্ছি। কদিনের বৃষ্টিতে জঙ্গলের রং যেন আরো গাঢ় সবুজ, ভেজা মাটিতে নানা জন্তুর পায়ের ছাপ। হাতিরা একটু আগেই যে গেছে তা টের পাওয়া যাচ্ছে। অবশেষে ওয়াচ টাওয়ারের কাছে পৌঁছলাম, নেমেই দেখি, একটা গাছের ডালের ওপর একটা ময়ূর দম্পত্তি লেজ ঝুলিয়ে বসে আছে। খুব গম্ভীর হয়ে কী যেন ভাবছে তারা। এমনিই যা ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফির হল্লা চলছে চারিদিকে.. এক গাদা লোকের চিৎকারের মাঝে পষ্ট শুনলাম  
ময়ুর গিন্নি--ওই...ওই। আবার এসেছে। দূর দূর অশান্তির শেষ নেই। কোন শালা বলে এরা বাঁদরের উন্নত সংস্করণ। আমাদের জঙ্গলের হনুমানগুলো এদের থেকে সভ্য ভদ্র। সক্কাল সক্কাল এসেই কাঁই মাই জুড়ে দিয়েছে। ওরে হারামজাদা তোর বাড়িতে গিয়ে আমি অসভ্যের মতো চিৎকার জুড়ি যদি অষ্টপ্রহর তোর কেমন লাগবে। 
ময়ুর কর্তা-আবার ক্যামেরা বাগিয়ে আসছে। দেব ঠুকরে?
-না থাক। এসব নিকৃষ্ট জীবের পেছনে অতো শক্তিক্ষয়ের মানেই হয় না। জঙ্গলে এসেছিস, এত সবুজ, কোথায় চুপ করে চারপাশ দেখবি তা না, অসভ্যের মতো ক্যালোর ব‍্যালোর। ওরে জঙ্গলে এসে একটু হাম্বল হতে হয়, যেখানে যাচ্ছিস সেই জায়গাটাকে মিনিমাম রেস্পেক্ট দিতে শেখ! ...."
-যাক, ওয়াচ টাওয়ারের দিকে গেছে সব। আপাতত কিছুক্ষন শান্তি।

--

সকাল সাড়ে সাতের কাছাকাছি....----যাত্রাপ্রসাদ ওয়াচ টাওয়ার----

অত সকালেও লোক গিজ গিজ করছে। উৎসাহী ধেড়ে বাচ্চা, তার ততধিক উৎসাহী বাপ-মা,মাঝবয়সী খোঁচা খোঁচা দাড়িওয়ালা মাঝবয়সী জেঠু,শান্তিকেতনী শাল গায়ে বুড়ো দাদু, ইয়াং ইংলিশ মিডিয়াম কন্যা,সেলফি স্টিক হাতে ছোকরা, নতুন বিয়েওয়ালা হাত ভরা চুড়ো পরা মহিলা--কে নেই সেই লটে। গাইডরা দেখলাম ভিড়ের চোটে খানিকটা ব্যাকফুটে।
গাইড-ওই ওই...ওই দেখেন, হর্ণবিল উড়ে গেল। 
-কোথায়! কোথায়!
-আরে আরে ওই যে। 
শান্তিনিকেতন দাদু-বুঝলেন কিনা, আমরা সেই যে কানহা গেছিলাম। ফাস ক্লাস, এখানে তেমন কিছু নেই...আর সেই যে কাজিরাঙা গেলাম, উফফফফ, ভাবা যায় না....তবে বুঝলেন কিনা, অষ্টমীর ভোগের কিন্তু তুলনা হয় না, হাঃ হাঃ হাঃ.....সেই তো সেই তো..
ধেড়ে বাচ্চা-ম্যা ম্যা, ওই উঁচু উঁচু জিনিসটা কি গন্ডার?
গাইড-নানা, ওটা সল্টপিট। পেছনে ঘাসের মধ্যে ওই যে সাদা পাখি উড়ছে, ওখানে গন্ডার।
ওই দেখেন সবুজ পায়রা, আর তার পেছনে ঝোপের মধ্যে বাইসন। ...নানা এদিকে আসেন, ওখান থেকে দেখবেন ক্যামনে।
ইংলিশ কন্যা-মাম, ঐটা কি পিজিয়ন??????
খোঁচা দাড়ি জেঠু- হ। পায়রারে পিZনই কয়।
শান্তিনিকেতনী-....তারপর সেই যে বুনিপ দেখলাম, ওফফ, সে ভাবা যায় না। আর সেবার যে ড্রাগন দেখলাম, মুখ থেকে পুরো আগুনের হল্কা বেরোচ্ছে বুঝলেন..........আরে আমাদের হোটেলের নীচে তো বাঘ এসে ঘুমোয় রোজ
খোঁচা দাড়ি-দূর মশাই। চুপ করেন না, এত বক বক করতাসেন, গাইড কী কইল বুZলামই না। 
সেলফি স্টিক- হাম এক সেলফি লে লে ক্যা?
গাইড-নিন না, তবে বেশি আওয়াজ কইরেন না।
নতুন বউ-ও বাইসন কে সাথ সেলফি আ হি নেহি রহা....
ছোকরা - আরে অতদূর থেকে আসে নাকি, সরুন, বাকিদের দেখতে দিন।

সকাল সময় দেখি নি । তবে রোদ চড়ে গেছিল বেশ....
ফিরতি পথ.... ফ্রম যাত্রাপ্রসাদ টু হোটেল...

সেই ময়ূরদুটো একই রকম ভাবে বসে আছে, বাকি গাড়িগুলোও বেরিয়ে গেছে, আমরাই লাস্ট। একটু একটু মন খারাপ, অতদূর থেকে জঙ্গলের বাসিন্দাদের দেখে ঠিক মন ভরে নি কারুরই।
গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ১০ মিটার মতো এগিয়েছে, হঠাৎ দেখি স্পিড কমে এসছে। প্রথমেই ভাবলাম আবার গেল বুঝি খারাপ হয়ে। গাইডের ইশারায় বাঁদিকে তাকিয়ে দেখি হাত বিশেক দূরে, জঙ্গল একটু পাতলা হয়ে এসেছে, আর সেখানেই বাইসন মহাশয় দাঁড়িয়ে খুব রিলাক্সড ভঙ্গিতে ঘাস পাতা চিবুচ্ছেন। তিনি খুব ধীর গতিতে একবার ডানদিকে তাকালেন, বাঁদিকে তাকালেন, আমাদের দিকে পেছন ঘুরে লেজ নেড়ে দুবার মাছি তাড়ালেন আর সব শেষে আবার খুব স্লো মোশনে জঙ্গলের ভেতর ঢুকে গেলেন। এখন ভাবলে মনে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম আসলে পুরো ঘটনা ঘটতে প্রায় মিনিট তিনেকের বেশি লাগেনি।  আমরাও কৃতার্থ হয়ে হোটেলে ফিরে এলাম।

 ব্রেকফাস্ট সেরে যখন লাটাগুড়ির পাট চুকিয়ে হোটেল থেকে বেরোচ্ছি ঘড়িতে তখন ১০টা প্রায়। আমাদের নেক্সট গন্তব্য বক্সা জাঙ্গল ইন।

Comments

Popular posts from this blog

সূচনা,নামকরণ এবং ইত্যাদি

পরশ পাথর

বুক-টুক