বেলা বাড়তে জানলা খুলে দেখি তখনও গোমড়ামুখো আকাশ জিভ ভেঙ্গাচ্ছে। তাও ঠিক হলো,
পরোয়া নট। আমরা
ঝালং,বিন্দু
ঘুরে আসবো। অগ্যতা
বৃষ্টিতে ভিজে
ভিজেই রওনা
হওয়া গেল। ভেজা
জুতো, আধভেজা
জামার হাতার
জন্য খিঁচড়ানো মেজাজ ঠিক হল
মূর্তি নদীর
ব্রিজে উঠে।
বৃষ্টিতে
পাহাড়ি নদী
অদ্ভুত মূর্তি
ধরেছে।
ঘোলা জল পাথরে আর ব্রিজের পিলারে
আছড়ে পরে
সাদা ফেনা
উগড়ে দিচ্ছে,
বেশিক্ষণ তাকালে
মাথা ঘুরে
যায়।
আমি জলে
বেশ ভয়
পাই, নীচু
হয়ে ছবি
তোলার চেষ্টা
করতে গেছিলাম। কিরকম
পা সুরসুর
করছিল, তাই ক্ষান্ত দিতে হল। সেটা
অবশ্য মুখে
বলিনি, বেশ
'এই ওয়েদারটাই
আসলে বাজে'
এরকম একটা
ভাব করে
সরে গেছি। সেখান
থেকে চললাম
ঝালং, বিন্দুর
দিকে।
এর আগেও
পাহাড়ে গেছি
ঘুরতে, শুকনো
পাথর খসে
পড়া পাহাড়,
সবুজ জঙ্গলে
ঢাকা পাহাড়,
রোদ- ঠান্ডায়
মাখামাখি পাহাড়
দেখেছি।
কিন্তু বৃষ্টি,
মেঘ আর
কুয়াশাতে এই
পাহাড়ের চেহারা
একদম অন্য
রকম।
চারপাশটা কিরকম
অদ্ভুত ছোকরা
সবুজ রং
ধরেছে।
ধোঁয়া ধোঁয়া
মেঘে দূরের
পাহাড় সব
আবছা।
...............
৪." come
cross the line"
বিন্দুতে যখন গিয়ে
নামলাম, প্রায়
১টা বাজে,
মেঘলা আকাশ
দেখে অবশ্য
সে বোঝার
উপায় নেই। ছাতা,
স্কার্ফ সব
সামলে জলের
থেকে জুতো
বাঁচানোর ব্যর্থ
চেষ্টা করে
একটু এগোতেই
দেখলাম বিন্দু
জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের গেট দেখা যাচ্ছে। ফোনে
উঁকি মেরে
দেখি 'নিয়ার
বাই টাওয়ারে'
ভূটানের কাছাকাছি
যে চলে
এসেছি সেটা
জানান দিচ্ছে
আর বলা
বাহুল্য প্রায়
বিদেশে চলে
আসায়, এদেশীয়
সিমওয়ালা মুঠোফোন
বার্তা বইতে
এক্কেবারে অক্ষম। হাঁ করে
জল কী
ভাবে টারবাইনে
আছড়ে পড়ে
দেখছিলাম।
হঠাৎ মায়ের
চিৎকার শুনে
দেখি আসে
পাশে সবাই
আছে বাবা
নেই, ঘাবড়ে
গিয়ে এধার
ওধার কয়েকবার
তাকাতেই দেখি
দূরে নীচে
নদীর চরে
পরে থাকা
বোল্ডারের ওপর একটা টাকমাথা বুড়ো
লোক জলের
দিকে ক্যামেরা
তাক করে
বসে আছে। এ
আ্যনটিক্স
আমার বহুকালের
চেনা, আর
বলা বাহুল্য
টাকটাও।
বাইরে এসে
কাঁই মাই
করা উচিত
হবে কিনা
মনে মনে
হিসাব করছি
যখন, তখন
দেখি গুটি
গুটি পায়ে
এক গোর্খা
মিলিটারি পুলিশ
এগিয়ে এসেছেন।
'- উঁ আদমি আপকে
সাথ আয়ে
হায়?'
-ইয়ে মানে , হাঁ
তো, হামারে
বাবা হায়।
-জলদি বুলাইয়ে, মানা
হায় নীচে
জানা! পিছলে
দিন এক
আদমি গিড়কে
মর গায়া.....
মা- আর বুলাইয়ে,
ডেকে যাচ্ছি,
আমার কথা
শুনলে তো। আমার
হয়েছে মরণ....(এই খানে
নিজের বাবা
মায়ের 'রাগারাগি'
হলে যে
ধরণের ক্যাটেগরিকালি
এক কথা
শোনা যায়,
সেইটা বসিয়ে
নিন।
আমি কষ্ট
করে টাইপ
করলাম না।)'
যাই হোক, অগত্যা
সমবেত প্রচেষ্টা(
পড়ুন চিৎকার)
বাবার দৃষ্টি
শেষমেশ আকর্ষন
করল, উঠে
এসে বেচারা
আরেকবার সবার
কাছে বকুনিও
খেলেন, আর
দেখা গেল
ক্যামেরাটিও কাজ করা মোক্ষম মুহূর্তে
বন্ধ করেছে। এরপরে
অবশ্য মাসিমনি
আর রিনটিনদি
খানিকক্ষণের জন্য আবার হারিয়ে গেছিল,
তবে বেড়াতে
গিয়ে ওরকম
ছড়ানো হয়েই
থাকে বলে
সে ঘটনা
উহ্য রইল।
বিন্দু থেকে ফেরার
পথে একজায়গায়
দুপুরের খাওয়ার
খেতে নামা
হয়েছিল,দোকানের
নাম ধাম
মনে নেই
তবে জায়গাটা
ভীষণ চমৎকার,
কান পাতলেই
জলঢাকা নদীর
আওয়াজ শোনা
যায়।
পেছনে গিয়ে
দাঁড়ালে নদীর
ওপারে ভূটানও
নাকি দেখা
যায় তবে
কুয়াশায় কিচ্ছুটি
দেখা যাওয়ার
উপায় ছিল
না।
আর পেটের
ভেতরের ইঁদুরগুলোও
শীত কাটিয়ে
ডন বৈঠক
দেওয়া শুরু করাতে আর পাতে পড়ার মেনুও চমৎকার
থাকায় আমরা
সোজা ডান
হাতের কাজ
সারতে বসে
গেলাম ।
ভাত, ডাল
আর মাছ-
তবে ডাল
পাতে পড়তে
একবার খাবি
খেলাম, ওরকম
সাদা পাতলা
ডাল আগে
দেখিনি কিনা। রহস্যের
উদ্ধার হলো
একটু পরে। হাফ
প্যান্ট পরা
একজন খাবার
দিচ্ছিলেন, তিনি একবার দোকানের বাইরে
আর ভেতরে
এ টেবিল
ও টেবিল
করছেন, আর
আকাশ থেকে
দেদার বৃষ্টির
জল তাঁর
হাতে ধরা
ডালের বাটিতে
মিশছে।
তাই ডাল
একেবারে তার
জলবৎ তরলং
দশা পার
করে প্রায়
জলে বদলে
গেছে আর
কী।
খেয়ে উঠলে দেখেছি
ঠান্ডা বেশি
লাগে,আধ
ভেজা অবস্থায়
হাত পা
রীতিমত শির
শির করছিল,
তার মধ্যেই
রওনা হলাম
সুনতালেখোলার উদ্দ্যশ্যে।
পথে একজায়গায় এই বোগেনভেলিয়ার ঝাড়ের সঙ্গে দেখা। সবাই যখন গাড়ির খোঁজে ব্যাস্ত, আমার ঠিক এরকম ফুলের ঝাড় সহ বাড়ি তৈরি হল, বাগানে পাহাড়ি ফুল গাছ লাগানো হয়ে গেল, সব শেষে জানলায় যখন নীল রঙের পর্দা লাগাচ্ছি মা তাড়া লাগালে সে কাজে ক্ষান্ত দিতে হল। তারপর ভয়ানক গরু মোষের গায়ের গন্ধ ভনভনানো গাড়িতে করে ঝুলন্ত ব্রিজ,
সেলফি ম্যানিয়াক
বাচ্চার অত্যাচার
আর কমলালেবুর
বাগান দেখে
সন্ধ্যেবেলায় যখন রকি আইল্যান্ডে নামছি, তখন হাত
পা ঠান্ডা। সারাদিন
খেপে খেপে
ভেজার কল্যানে
মাথা টনটন। একটা
ছোট গুমটির
এক কাপ
কফি পুরো
ইডেনের সোমরসের
সমান লেগেছিল। আর
পাহাড়ী নদীর
ওপরে লোহার
ব্রিজ, জলের
গর্জন, গাড়ি
চলার ধাতব ঠঙ ঠঙ
আওয়াজ, আর
ঠান্ডা হাওয়ার
ঝাপটায় বোধহয়
ম্যাজিক আছে,
এ ভালোলাগা
পুরোনো তো
হয়ই না,
বরং সব
বিরক্তি,রাগ
ভুলিয়ে দেওয়ার
ক্ষমতা রাখে। সন্ধ্যেবেলায়
সব শেষে
অন্ধকারে কাঁপতে
কাঁপতে রিসোর্টে
ঢুকছি, বুঝলাম
বাইরের ঠান্ডা
হাওয়াতে মাথা
ধরলেও মনের
ভেতরটাতে কে
যেন হিম
ভাব লাগিয়ে
দিয়েছে।
খুব জ্বরের
মধ্যে মাথায়
অমৃতাঞ্জন লাগালে যেমন লাগে, খানিকটা
সেই রকম
ঠান্ডা।
............
Comments
Post a Comment