পরিচিতি

জগতের যত কঠিন কাজ আছে তার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন কাজ খুব সম্ভবত নিজের ইন্ট্রোডাকশান দেওয়া। আমি কে , আমি কী এর উত্তর দেওয়ার থেকে কঠিন কাজ নেই। আমার এই পুঁচকে ব্লগের বয়স খুব বেশিদিন না  এবং আদৌ কেউ এই ব্লগ পড়ে কিনা সে নিয়ে আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে , তাও  নিজের পরিচিতিটা দেওয়া উচিত, তা সে যত কঠিন কাজ ই হোক না কেন।  তাহলে শুরু করা যাক...... আমার নামঃ  -আমার ভাল নাম সেঁজুতি , ইংরিজিতে বানান বিভ্রাটে বেশির ভাগ লোকের কাছে আমি সেঞ্জুতি  , তাই আমার ডাক নামটা আমার বেশি পছন্দের, সেটা হোল ঝিল্লী, এই নামটা আমার দিদার দেওয়া। ট্যাঁ ট্যাঁ  করে সারাদিন চিৎকার করতাম বলে হয়ত।  আমি কী করি? -এটার উত্তর দেওয়া সবচাইতে সহজ। আমি ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াই। আমার বয়স কত? - আমার জন্ম নব্বই দশকের গোড়ার দিকে। বাকিটা আর বললাম না।  আমার ঠিকানা -কেন এই তো - http://choshmaebongityadi.blogspot.in  তবে আমি যেখানে 'থাকি' সে জায়গাটা হোল কোলকাতা। রিলেশানশিপ স্ট্যাটাস   - টারমিনালি সিঙ্গেল  রিলিজিয়াস ভিউস   - কি সব্বনাশের প্রশ্ন !  আমার কী ভালো লাগে? -হেহ! সুপার হিরো কমিক্স (বিশেষত হারলি কুইন এ

ইন্দুবালার চিত্রাহার

ইন্দুবালা দেবী চোখ মেলবার চেষ্টা করছিলেন, সামনের গোলাপি ছায়াটা কানের কাছে এসে ফিস ফিস করে জিজ্ঞেস করছে কেমন আছেন মাসিমা, আপনার বাড়ির লোক এসেছে।
ইন্দুবালা বলতে চাইছিলেন ভালো আছি, শীত করছে, কিন্তু পারলেন না..গলা দিয়ে ঘরঘর আওয়াজ বেরোলো একটু।
চোখ বুঁজলেন, ঘাটাল- ইলা বারান্দায় শোয়া, লালচে ছোট্ট পাদুটো কাঁথার ভেতর থেকে বেরিয়ে আছে। তড়িঘড়ি ছুট, কাঁদছে, পিঁপড়ে ধরল না তো!
-'মাগো, শুনতে পাচ্ছো? আমরা এসেছি, দেখো' কার গলা? আওয়াজটা ভেজা ভেজা, ইন্দুবালা তাকালেন, ঝাপসা, হলদে, নীল ,লাল ছায়া দুলছে সামনে।
- 'শুনতে পাচ্ছি, ভালো আছি, কাঁদিস না, বাড়ি নিয়ে যাবি না আমাকে?'
- 'ডাক্তারবাবু দিম্মা কী কিছুই টের পাচ্ছে না?'
ইন্দুবালা আবার চোখ বুঁজলেন- কুর্তী- রান্নাঘরের পেছনে বাঘ ঢুকেছে। আমার ইলা, বিনু , মিঠু ছোট যে! বাড়িতে একটা পুরুষমানুষ নেই! ইন্দুবালা চিৎকার করতে চাইলেন, চা বাগানের কুলি কামিনরা টিন পেটাচ্ছে খুব জোরে!
'- বাঘ! বাঘ!'
'-ডাক্তারবাবু মা অমন করছে কেন? মায়ের কী কষ্ট হচ্ছে খুব?'
ইন্দুবালা চোখ খোলার খুব চেষ্টা করলেন আরেকবার।
রান্নাঘরে মাছের গায়ে হলুদ মাখানো, অন্ধকার বাইরে। পরশু ভোট। ওদের বাবা ফেরেনি এখনও। বাইরে কোথায় খুব জোরে একটা আওয়াজ হল, আলোর ঝলকানি সামনে - ইলা, বিনুর বাবা দরজার সামনে শোয়া-মিঠু,বিনুর পড়ার আওয়াজটা থেমে গেল। কারা যেন ছোটাছুটি করছে, দরজাটা ভেঙে যাবে বোধহয় ধাক্কার চোটে- ইন্দুবালা ডুকরে উঠতে গেলেন- আমার ইলা, বিনু, মিঠু ছোট যে! মাছের বাটি উল্টে রান্না ঘরের মেঝেতে-লম্বা হলদে দাগ গড়াচ্ছে।
'- দিম্মার কী খুব কষ্ট হচ্ছে ডাক্তার বাবু?'
'-দেখুন ফিজিক্যাল পেইন হওয়ার কথা না, মরফিন ড্রিপ চলছে, তবে এই সময় হ্যালুসিনেট করাটাও খুব স্বাভাবিক। যতটা কম্ফোর্টেবল রাখা যায় আমরা চেষ্টা করছি'
ঢাকা- বাংলা ক্লাস, রুকসানার লম্বা বেনুনিতে লাল ফিতে লাগানো,
'-দ্যাশটা তর না! তোরা চৈল্যা যাবি!'
রুকসানার নাকের পাটা লাল।
ইন্দুবালা মাঠের দিকে তাকালেন, চৈত্রের রোদের কি ঝাঁজ! চোখ জ্বলে যায় যেন। গলার কাছটায় তেষ্টা পাকিয়ে উঠছে।
'-মা বিয়া হইলে কী হয়?'
চারদিকে শাঁখ উলুর আওয়াজ, সামনে একটা শ্যাম বর্ণা লম্বা লোক দাঁড়িয়ে মিটি মিটি হাসছে, কানের ওপরে একটা জরুল। ইন্দুবালার লজ্জ্বা করছিল।
ইন্দুবালা তাকাতে চাইছিলেন।
'- ইন্দুমা রে, তুই বড় হইয়া গেলি!' মা চুলে বিলি কেটে দিচ্ছেন, কিন্তু পাশে ওটা ইলার মেয়ে না? চোখে ধ্যাবরা কাজল দিয়ে দিম্মা দিম্মা করছে। কী আরাম হঠাৎ। ইন্দুবালা আর চোখ খোলবার চেষ্টা করলেন না।

Comments

Popular posts from this blog

সূচনা,নামকরণ এবং ইত্যাদি

পরশ পাথর

বুক-টুক