পরিচিতি

জগতের যত কঠিন কাজ আছে তার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন কাজ খুব সম্ভবত নিজের ইন্ট্রোডাকশান দেওয়া। আমি কে , আমি কী এর উত্তর দেওয়ার থেকে কঠিন কাজ নেই। আমার এই পুঁচকে ব্লগের বয়স খুব বেশিদিন না  এবং আদৌ কেউ এই ব্লগ পড়ে কিনা সে নিয়ে আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে , তাও  নিজের পরিচিতিটা দেওয়া উচিত, তা সে যত কঠিন কাজ ই হোক না কেন।  তাহলে শুরু করা যাক...... আমার নামঃ  -আমার ভাল নাম সেঁজুতি , ইংরিজিতে বানান বিভ্রাটে বেশির ভাগ লোকের কাছে আমি সেঞ্জুতি  , তাই আমার ডাক নামটা আমার বেশি পছন্দের, সেটা হোল ঝিল্লী, এই নামটা আমার দিদার দেওয়া। ট্যাঁ ট্যাঁ  করে সারাদিন চিৎকার করতাম বলে হয়ত।  আমি কী করি? -এটার উত্তর দেওয়া সবচাইতে সহজ। আমি ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াই। আমার বয়স কত? - আমার জন্ম নব্বই দশকের গোড়ার দিকে। বাকিটা আর বললাম না।  আমার ঠিকানা -কেন এই তো - http://choshmaebongityadi.blogspot.in  তবে আমি যেখানে 'থাকি' সে জায়গাটা হোল কোলকাতা। রিলেশানশিপ স্ট্যাটাস   - টারমিনালি সিঙ্গেল  রিলিজিয়াস ভিউস   - কি সব্বনাশের প্রশ্ন !  আমার কী ভালো লাগে? -হেহ! সুপার হিরো কমিক্স (বিশেষত হারলি কুইন এ

'ইটস কমপ্লিকেটেড'

" People run from rain
but sit in bathtubs full of
water."
-Charles Bukowski,The Roominghouse Madrigals: Early Selected Poems, 1946-1966
কাল বিকেলে অটো ধরার জন্য যখন দৌড়াচ্ছি, খেয়াল করে দেখি, আকাশের মুখ ভার ভার, রাস্তায় ধূলো পাক খেতে খেতে সামনের দিকে দৌড়াচ্ছে। তখনি বুঝেছি, আজ আর রক্ষে নেই। ক্যাফের ভেতর থেকে চড় বড় আওয়াজ শুনেই টের পেয়েছি, ঐ ঐ! এসেছেন তিনি। যা ভয় পাচ্ছিলাম ঠিক তাই! বেরিয়ে দেখি অটোর জন্য শ দুয়েক মানুষ হা পিত্যেশ করে দাঁড়িয়ে। আর এমনিদিনেই অটোয়ালাদের সোয়াগ দেখে পানা পুকুরে ঝাঁপ দিতে ইচ্ছে হয়, বলা বাহুল্য,  কাল তেনাদের আবদার রানী কৈকেয়ীর ডিমান্ডকে হার মানাবে।
অগত্যা রিক্সা করে ভিজে বেড়াল হয়ে বাড়ি ফেরা। তাপ্পর এইসব কোটেশন দেখলে গা পিত্তি জ্বলে যায় জাস্ট। মানে ফাজলামির সময় ইয়ার্কি আরকী! আরে বাথটাবে কোন মানুষ জামাকাপড় পরে কাদা মাখা জল ভরে বসে থাকে! আর যদি আমি বাথটাবেই বসেছি, তার মানে আমি তো অলরেডি বাড়ি পৌঁছে গেছি, মাঝরাস্তায় র্যান্ডম অচেনা লোকের সাথে অটোর লাইনে 'এই এই আপনি মাঝখান থেকে ঢুকলেন কেন' বলে ঝগড়া করতে হচ্ছেনা। মানে ব্যাপারটা এমন শোনাচ্ছে যেন, যেন কেউ রোদ ভালোবাসি বললে তাকে জৈষ্ঠমাসের ভর দুপুরে পাঁচমাথার মোড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা এক পায়ে দাঁড়িয়ে সেটাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করতে হবে!অমন রোদে অতক্ষণ দাঁড়ালে তো সানস্ট্রোক অবধারিত। যেকোনো জিনিস ই পরিমাপ ক্রস করলে বিপদ। মানে বেশি জল খেলে কিডনি খারাপ হবে না তার কী গ্যারান্টি। আর রোদ থাকলে জামাকাপড় অন্তত শুকিয়ে যায়। এরকম আধ ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে গন্ধ ওয়ালা ফ্লেশ প্রিজন ঢাকার  বস্তু সারা বাড়িতে ঝুলে থেকে নাকে মুখ আটকে উপদ্রিব করে না। উপরন্তু এই বৃষ্টি প্রেমী পাবলিকের উৎপাত। শুরু হতে না হতে কোবতে লেখা শুরু হয়ে যাবে। 'বাদোলো দিনেরো প্রোথোমো কদোমো ফুঊঊঊঊঊঊঊল'- ওরে হতভাগা এই ঘিঞ্জি কলকাতায় জমা জল , বিতিকিচ্ছিরি ট্র্যাফিক আর ঘেমো গন্ধওয়ালা কো প্যাসেঞ্জারের মধ্যে কদম ফুলটা কোথায় পেলি তুই! এদেরকে স্রেফ কামড়ে দিতে ইচ্ছে করে। আর আমার মতো আতা ক্যালানে পাবলিক হলে তো আর কথাই নেই। এমনি শুকনো জায়গাতেই সেফ নই! মেঝেতে জলের ছাঁট, হঠাৎ করে জলের ছিটকানো দাগ টেনে লম্বা হয়ে গেছে। মানে আমিও দাগের সাথে লম্বা হয়ে গেছি আর কী। তাপ্পর আর কী, সপ্তাহ খানেক আকোনাইট 30 আর ভোলিনি! এমন বৃষ্টির মুখে নুড়ো জ্বেলে দিতে ইচ্ছে করে। শুধু বৃষ্টি না, ঐ 'আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে' শুনে প্রায় মূর্ছিত হয়ে আদেখলামো করা জনতার মুখেও। শুরু হতে না হতে ধীনতানানা করা চালু হয়ে যাবে। পড়ছে তো আকাশ থেকে জল, আম পোড়া শরবত হলেও না হয় এক্সাইটমেন্টের কারণ বুঝতাম, গ্লাস বাড়িয়ে বসলেই হল, কিন্তু তাও তো না। প্রেমিক জাতটা এমনিতেই ন্যাকা হয়, আর বৃষ্টি পড়লে তো কথাই নেই। একে মা মনসা, তায় ধুনোর গন্ধে কুলোপনা চক্কর। 'তোমার কথা মনে পড়ছে গো' বলে কেঁদে কঁকিয়ে একসা! আরে বাসের ছাঁট আটকানোর জন্য সব জানলা বন্ধ, ভ্যাপসা গরমে আর ঘামের দুর্গন্ধে বিয়ে বাড়ির ভাত উল্টে আসবে , সেখানে কোনো সুস্থ মানুষের প্রেমটা পায় কোথা থেকে। ইল্লি নাকি!
অগত্যা বোঝাই যাচ্ছে যে আমি বৃষ্টি আর বৃষ্টির মাকে দু চোক্ষে দেখতে পারিনা। হার হারামি শয়তানের ডিম একটা। এতো শত যন্ত্রনা তো দেবেই আবার বাড়ি থাকলেও শান্তি নেই। ঝাঁকড়া করবী গাছকে ভিজতে দেখে কাজ পন্ড হবে। গজলের সুর আর বৃষ্টির হোয়াইট নয়েজ মিলে মিশে ভয়ানক একটা সিচুয়েশন তৈরি করবে, রিক্সা চড়ে ফেরার পথে বৃষ্টির ছাঁট লেগে গা হাত পা সরীসৃপের মতো ঠান্ডা হলেও রাগতে গিয়ে রাগতে পারব না। বারান্দার ভেজা হাওয়া, লীলা মজুমদার আর চায়ের ধোঁয়া ওঠা কাপে আলসেমি মিশে গিয়ে কবিতা হবে। কাঁচের জানলা বেয়ে জলের ফোঁটা দৌড়ে দৌড়ে নামছে, তারপর টুক করে গড়িয়ে স্ল্যাবের ওপর , উফ কী দস্যি দেখ।আর তারের ওপর বসা ভেজা চুপচুপে কাকটা! তাকে ভুলে গেলে!  গরম কমেছে, গা ধুতে যাওয়ার তাড়া নেই, কাকটা তো রইলোই। হাতের আঙুল গুলো জলে ভিজে ঠান্ডা, ফ্যাকাশে, চামড়া অল্প কুঁচকে গেছে তাও টুপ টুপ করে পড়া জল ধরছে। না, ধরছে বলি কীভাবে, ছুঁয়ে আছে শুধু। আর রাত্তির হলে তো কথাই নেই, ভেপার ল্যাম্পের হলদে আলো আর পাশের বারান্দায় জ্বলা গোল্ডফ্লেকের ধোঁয়ার গন্ধ, আর মন খারাপের ফেরত আসা। আর রিকশা আর খুব ভালো বন্ধুর সাথে ভিজতে ভিজতে বকম বকম।
তাহলে শেষমেশ বৃষ্টির সাথে আমার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দাঁড়াল 'আঃ! ইটস ভেরি কমপ্লিকেটেড'!
আর বুকোয়াসকি? ক্ষমা করে দিলাম।
ওমা! তাহলে যমুনা , কদম গাছ আর কুঞ্জবন? উফ! ন্যাকা ষষ্ঠী। গা জ্বলে যায়।

Comments

Popular posts from this blog

সূচনা,নামকরণ এবং ইত্যাদি

পরশ পাথর

বুক-টুক