পরিচিতি

জগতের যত কঠিন কাজ আছে তার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন কাজ খুব সম্ভবত নিজের ইন্ট্রোডাকশান দেওয়া। আমি কে , আমি কী এর উত্তর দেওয়ার থেকে কঠিন কাজ নেই। আমার এই পুঁচকে ব্লগের বয়স খুব বেশিদিন না  এবং আদৌ কেউ এই ব্লগ পড়ে কিনা সে নিয়ে আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে , তাও  নিজের পরিচিতিটা দেওয়া উচিত, তা সে যত কঠিন কাজ ই হোক না কেন।  তাহলে শুরু করা যাক...... আমার নামঃ  -আমার ভাল নাম সেঁজুতি , ইংরিজিতে বানান বিভ্রাটে বেশির ভাগ লোকের কাছে আমি সেঞ্জুতি  , তাই আমার ডাক নামটা আমার বেশি পছন্দের, সেটা হোল ঝিল্লী, এই নামটা আমার দিদার দেওয়া। ট্যাঁ ট্যাঁ  করে সারাদিন চিৎকার করতাম বলে হয়ত।  আমি কী করি? -এটার উত্তর দেওয়া সবচাইতে সহজ। আমি ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াই। আমার বয়স কত? - আমার জন্ম নব্বই দশকের গোড়ার দিকে। বাকিটা আর বললাম না।  আমার ঠিকানা -কেন এই তো - http://choshmaebongityadi.blogspot.in  তবে আমি যেখানে 'থাকি' সে জায়গাটা হোল কোলকাতা। রিলেশানশিপ স্ট্যাটাস   - টারমিনালি সিঙ্গেল  রিলিজিয়াস ভিউস   - কি সব্বনাশের প্রশ্ন !  আমার কী ভালো লাগে? -হেহ! সুপার হিরো কমিক্স (বিশেষত হারলি কুইন এ

একটা বিচ্ছিরি প্রেমের গল্প

-এই, শুনছিস?
-বল।
-এরকম রেগে রেগে উত্তর দিচ্ছিস কেন? আমার কী দোষ বল।
-তোর দোষ না তো কি আমার দোষ! তুই, তুই একটু আগে বুঝলেই আমাকে আজ এই সিচুয়েশনে পরতে হতো না। আচ্ছা তুই কী একটুও বুঝিস না। আমি পারব না, আমি কিছুতেই এটা পারব না। প্লিজ আমাকে যেতে দিস না...প্লিজ
-এই বোকা মেয়ে! কাঁদছিস কেন। আমু তোকে খুব ভালো রাখবে দেখিস। কত স্মার্ট, হ্যান্ডসাম, সাকসেসফুল, তোর কোনো কষ্ট হবে না দেখিস।
-এটা বলতে পারলি তুই! তুই লজ্জ্বা করছে না কথাগুলো বলতে! জানোয়ার। দূর হ।
-আবার কাঁদে! আচ্ছা বল তুই এরকম কেন করছিস। কাকিমা কাকু কত খুশি, ওনারাও তো এটাই চাইছেন, আর তাছাড়া কদ্দিন আর এরকম ক্যাবলা মালকে নিয়ে তুই চলবি বল....ওই দেখো। আবার কাঁদে!আহ...শেষ দিনও তুই যদি এরকম কান্নাকাটি করিস তাহলে আমি কী করি বল।
-তোর কী তাতে! কাকু কাকিমা কি চাইছেন সেটা দেখছিস, আর আমি? আমার চাওয়ার, আমার ইচ্ছের দাম নেই তোর কাছে। বেশ। আমি সব বুঝেছি।
- বিশ্বাস কর, তুই ভালো থাকবি ওর কাছে। ও তোকে একটা কম্ফোর্টেবল লাইফ দেবে, আমি সেটা পারব না। তুই ভালো থাকবি খুব..বিশ্বাস কর।
-চাই না ওই কম্ফোর্টেবল লাইফ। ও আমাকে মন খারাপ হলে লেকের ধার এনে দিতে পারবে! বৃষ্টিতে ভিজে দক্ষিণাপনের ফুচকা দিতে পারবে! ও পারবে আমাদের নন্দনের গুলতানি রিপ্লেস করতে!
-তুই বাচ্চা নয়, একটা সময় পর ওগুলো ম্যাটার করবে না সেটা তুইও বুঝিস। you never know, you might actually fall in love with him!
আর তাছাড়া আমি রইলাম তো। I will always be here, waiting for you. তুই ফিরলেই হবে; আমি এখানেই থাকব।
-তুই এসব কী বলছিসটা কী! মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি!
-তোর ভয়টা কোথায়? তুই ফিরতে পারবি না কখনো? না ফিরতে চাইবি না?
-কলকাতা! তুই এটা বলতে পারলি!

.......
অতঃপর আমার গল্পের ফার্স্ট চ্যাপ্টার এখানেই শেষ হল। আমিও বাক্স প‍্যাঁটরা গুছিয়ে কলকাতা ছেড়ে চললাম আহমেদাবাদ। আমু আমাকে ভালো রাখবে কিনা জানিনা, কিন্তু আপাতত কলকাতার সাথে আমার ব্রেকআপ ছাড়া গতি নেই। লং ডিসটেন্স রিলেশনশিপ পোষাবে না আমাদের। বাবা মা, আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব সব্বাইকে ছেড়ে একটা নতুন জায়গা। I am leaving behind everything that was familiar,everything that was home.
...
চারদিকে কংক্রিটের জঙ্গলে আজকাল আর আমাদের বাড়িতে রোদ ঢোকেই না প্রায়। সকালে ঘন্টাখানেক জানলার ফাঁক দিয়ে একচিলতে আলোর ফালি টুকি দিয়ে যায়। জানলার ওপারেই রুপু কাকুদের ছাদের পাঁচিল। প্রতিদিন ঘড়ি ধরে নটা-সাড়ে নটা নাগাদ একটা হলুদ কানওয়ালা সাদা বিল্লি এসে ওইখানে রোদ পোহায়। আর আমি কোনোদিন চা, কোনোদিন মায়ের বকুনি খেতে খেতে তার কান্ড কারখানা দেখি।প্রথমে খানিক্ষন  জিভ দিয়ে চেটে চেটে গা পরিষ্কার করে, কান মাথা চুলকায় আর সব শেষে ধীরে ধীরে হেলতে দুলতে পাঁচিলের ওপর হেঁটে গিয়ে ছাদের কোনটায় পৌঁছে এক লাফে কেশব কাকুদের বাড়ির দেওয়ালের ওইপারে অদৃশ্য হয়ে যায়। প্রতিদিন এক রুটিন। আমার মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়, বেড়ালটা মনে হয় টের পেয়েছে যে ওকে কেউ রোজ দেখে; ওই জন্যই এত কেত দেখায়। ব্যাপারটা অলরেডি অতি নাটুকে শোনাচ্ছে, কিন্তু ঘটনা হল, একটা জায়গা ছেড়ে যাওয়া মানে শুধু আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব ছেড়ে যাওয়া না তো। প্রত্যেকবার ছুটি ছাটায় বেড়িয়ে আসার পর ফেরার সময় হাওড়া টু যাদবপুরের বাসে উঠলে বাসটা এসপ্লানেড, হেস্টিংস ছাড়িয়ে টুক করে ভিক্টোরিয়াকে পাশ কাটিয়ে 'রবীন্দ্র সদন চত্বর' ঢুকে পড়লেই আমার মনটা ভালো হয়ে যায়। 'নিজের জায়গায় এসে গেছি বাবা, শান্তি!' বলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। একটা শহরের ইঁট কাঠ বালি, লোকজন, হাঁক ডাক,কানে পরিচিত ভাষা ছিটকে আসা সব নিয়ে আমার এই শহরটা; আমার ৮বির অটোকাকু থেকে শুরু করে ওই হলদে কানওয়ালা বেড়াল, পাড়ার নেড়ি এন্টেনা, আর করবী গাছের হলদে ফুল সবটাই। মানুষজনের সাথে তাও যোগাযোগ থাকে, কিন্তু শহরটা-তার সাথে তো আর হোয়াটস‍‌‌ আ্যপে কথা বলা যায় না। পোসেনজিতের ফিলিম হলে বেশ কায়দা করে হাত পা ছুঁড়ে এইখানে একটা গলা কাঁপিয়ে 'বিদায়' বলা উচিত যেত। কিন্তু খামোকা করবী গাছের তলায় দাঁড়িয়ে ওরকম করলে লোকে আহমেদাবাদের বদলে রাঁচির টিকিট কেটে আমাকে পাঠানোর বন্দোবস্ত করবে।
তাই আপাতত মন খারাপটাকে নিয়েই ক্ষান্ত দিতে হচ্ছে। তবে কলকাতা হারামজাদা যাই বলুক, আমি এত সহজে ওকে থোড়াই ভুলেছি। সুযোগ পেলেই লাফ দিয়ে চলে আসবো। ততদিন বিল্লি মশাই অডিয়েন্স ছাড়াই রোদ পোহাক আর আমাকে ছাড়াই লোকজন সন্ধ্যেবেলায় ঢাকুরিয়া ব্রিজ হেঁটে পেরোক।

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

সূচনা,নামকরণ এবং ইত্যাদি

পরশ পাথর

বুক-টুক